অনেকেই মনে করেন, বিয়ে মানেই রোমান্টিক স্বপ্ন, ফুল আর ভালোবাসার মিষ্টি গল্পে পরিপূর্ণ। তারা মনে করেন প্রেমে পড়াই বিয়ে নামক সুখের সাগরে ভাসার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তাদের অনেকেরই এ স্বপ্ন ভেঙে যায়, যখন দেখেন বিয়ে নামক সম্পর্ককে সফল করতে প্রয়োজন সমঝোতা, পরস্পরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা আর অনেক বেশি পরিমাণে সেক্রিফাইজিং মনোভাব। ভালেবাসা ছাড়া জীবনের কথা ভাবা যায় না। ভালেবাসাকে কেন্দ্র করেই আমাদের জীবন আবর্তিত হয়। ভালোবাসাকে এড়িয়ে জীবনযাপনও সম্ভব নয়। ভালোবাসা একটি বিমূর্ত বিষয়। এই পৃথিবীতে কেউই একা নয়। সবার জীবন এক বহতা নদীর মতো বয়ে চলে। জীবনপথে চলতে চলতে সব মানুষই একজন সঙ্গীর প্রয়োজন অনুভব করে। এমন এক সঙ্গী যার সঙ্গে শেয়ার করা যায় জীবনের সব অনুভূতি।
সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই মানুষ প্রেমে পড়ে। এই প্রয়োজনীয়তা এই অনুভব প্রকৃতি প্রদত্ত, সহজাত এবং চিরন্তন। যাপিত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের কাছেই ধরা দেয় প্রেমের বারতা। এই পৃথিবীতে প্রেমের এমন কিছু নিদর্শন রয়েছে যা আটপৌরে সাধারণ গতানুগতিক জীবনের গণ্ডিকে ছাড়িয়ে সব মানুষের মুখে মুখে ফেরে প্রেমের অমর গাথা হয়ে। রোমিও-জুলিয়েট, লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জুলেখা, শিরি-ফরহাদ, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমগাথা যুগে যুগে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলকে অনুপ্রাণিত করেছে, প্রেমের জন্য ত্যাগ স্বীকারে সাহস জুগিয়েছে। আর তাই তো বরাবরের মতো ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে ভালোবাসার উৎসবে মেতে উঠবে সবাই আবারো। এত যান্ত্রিকতার মাঝেও ভালোবাসার বিচিত্র আনুষ্ঠানিকতায় মেতে উঠবে অনেক রোমান্টিক জুটি। দিনটিকে বর্ণাঢ্য, মিষ্টি অনুভূতিতে জড়ানো এবং স্মরণীয় করে তুলতে দুজনে মিলে কত বিচিত্র পরিকল্পনা করেছেন হয়তো-বা, কিন্তু ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র একটি দিনের মধ্যে ভালোবাসার আনুষ্ঠানিকতার ডামাডোলে হূদয়ের একান্ত আবেগ অনুভূতিগুলোকে সীমাবদ্ধ করে ফেলার কোনো মানে হয় না।
একটি দিন নয়, বছরের সব দিনেই ভালাবাসার রঙে রাঙিয়ে তোলা উচিত প্রত্যেকের জীবন। ভালোবাসা বলতে আমরা সাধারণত শুধু প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের সম্পর্ককেই বুঝে থাকি। আসলে কিন্তু তা নয়, এই পৃথিবীতে যে কাউকেই ভালোবাসা যায়। সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা, ভাই-বোনের ভালেবাসা, মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ইত্যাদিতে ভালোবাসা বিচিত্ররূপে প্রকাশিত হয়। ভালোবাসা অনেক পবিত্র একটি অনুভূতি। ঠিক তেমনিভাবে প্রেমও পবিত্র। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে অহেতুক ছলনা মোটেও উচিত নয়। এ নিয়ে প্রতারণাও মহাপাপ। স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সত্যিকার ভালোবাসা হয় না। প্রেম হচ্ছে পৃথিবীর মধুরতম সম্পর্ক যেখানে থাকবে না স্বার্থ আর লোভের উপস্থিতি, থাকবে শুধুই ভালোবাসা।
ফাল্গুন এলে প্রকৃতিতে ভালোবাসার গুঞ্জন শুরু হয়। রঙ রূপ সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বহুরঙা নিসর্গ ছুঁয়ে যায় মন। ফাল্গুন আর ভালোবাসা যেন এক সঙ্গে গাঁথা। ফাল্গুন মানেই ভালোবাসার বর্ণিল রঙছটা। সেই রঙে মনের মধ্যেও ভালোবাসার জোয়ার জাগে। ভালোবাসার নেশায় ডুবে গিয়ে বুঁদ হতে কোনো বিশেষ দিন লাগে না। প্রতিদিন প্রতি প্রহরে প্রাণের মানুষটির জন্য হূদয়ে কেমন করে ওঠাটাই ভালোবাসার প্রকাশ। প্রিয় মানুষটির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার মধ্যেই ভালোবাসার সার্থকতা। এবারের ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে আমাদের সবার অঙ্গীকার হোক-ভালোবাসার জোয়ারে আমরা মনের সব দুঃখ-গ্লানি, কলঙ্ক, পাপ, অভিশাপমুক্ত হবো, স্বার্থপরতা, নীচতা, পাশবিকতা, কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবো, ভালোবাসার মিষ্টি আবেগে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করব সব ধরনের সম্পর্ককে, ভালোবাসার ছোঁয়ায় জীবনের সৌন্দর্যকে আরো উজ্জ্বল প্রাণবন্ত অর্থবহ করে তুলব। এর মাধ্যমেই ভালোবাসা দিবস যথার্থ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে সবার কাছে।
লেখক : সাবেক ব্যাংকার ও মুক্তগদ্য লেখক