Newsun24

Most Popular Newsportal

রাজবাড়ী

দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী হতে ১৪ কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ

রাজবাড়ী সংবাদদাতা:
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী থেকে পাচার হয়ে আসা ১৪ জন কিশোরীকে উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে ১৪ কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।  বুধবার দুপুরে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সাংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার হওয়া কিশোরীরা তাদের ওপর হওয়া নির্মমতার চিত্র তুলে ধরেন। তারা জেলা পুলিশের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর জনৈক নাজমা বাড়িওয়ালীর একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে ওই কিশোরীদের গোয়ালন্দ থানা পুলিশের সদস্যরা উদ্ধার করেছেন। তাদের এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন, ডিআইও ওয়ান সাইদুর রহমান, গোয়ালন্দ থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়েবীর, রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার, ডিআইও টু প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাসসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
জেলা পুলিশ রাজবাড়ী ফেসবুক পেইজ থেকে নেওয়া:
রাত অনুমান ১২.৩০ ঘটিকা। অফিসার ইনচার্জ গোয়ালন্দঘাট থানার মোবাইল নম্বরে ফোন। কান্না বিজরিত কন্ঠে একটি মেয়ে বলে উঠে , স্যার আমাকে বাঁচান, আমাকে ওরা মেরে ফেলবে, আমি এখানে থাকতে চাই না, আমাকে উদ্ধার করুন, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। গোয়ালন্দঘাট থানাধীন দৌলতদিয়া পতিতালয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি (খদ্দের) এর মোবাইল আকুতি মিনতি করে নিয়ে ফোন করে এসব কথা জানান মানব পাচারের শিকার পতিতা পল্লিতে বিক্রিত এক মেয়ে। এসব কথা শুনে তাৎখনাত অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌছান এবং পুলিশ সুপার জনাব এম এম শাকিলুজ্জামান মহোদয়কে জানান।
ঘটনা শুনে পুলিশ সুপার মহোদয় দ্রুত তাদের উদ্ধারে নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশক্রমে অফিসার ইনচার্জ, গোয়ালন্দঘাট থানা, রাজবাড়ী’র নেতৃত্বে থানা পুলিশের একটি টিম দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর মধ্যে নাজমা বেগম এর বাড়ী হতে প্রথমে সিমু আক্তারসহ (ছদ্দ নাম) ৩ জন কিশোরীকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর সিমু আক্তার (ছদ্দ নাম) জানায় তার নির্মমতার কাহিনি। আমার পিতার মৃত্যুর পরে আমাদের পরিবারে আর্থিক অভাব অনটন দেখা দেয়। আর্থিক অভাব অনটনের কারণে আমি প্রায় ০২ (দুই) বছর পূর্বে ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করতে আসি। গার্মেন্টেসে কাজ করা অবস্থায় এক মহিলার সাথে আমার পরিচয় হয়। করোনা ভাইরাসের কারনে আমাদের গার্মেন্টেস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি অসহায় হয়ে পড়ি এবং ঐ মহিলাকে আমার পরিবারের অভাব অনটনের কথা বলি। মহিলা আমাকে ভাল বেতনের একটি চাকুরি দেওয়ার কথা বলে।
আমি আমার পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা চিন্তা করে ভাল বেতনে চাকুরি করতে চাই। মহিলা আমাকে ভাল বেতনের চাকুরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকা থেকে দৌলতদিয়া ফেরীঘাটে নিয়ে আসে। মহিলা আমাকে দৌলতদিয়া বাজারের বিভিন্ন স্থানে ঘুুরিয়ে দৌলতদিয়া পতিতালয়ের মধ্যে এক বাড়ীতে নিয়ে আসে। কথা বার্তা বলার সময় আমি বুঝতে পারি মহিলা আমাকে দৌলতদিয়া পতিতালয়ে পতিতাবৃত্তি পেশায় নিযুক্ত করার জন্য নিয়ে এসেছে। এক পর্যায়ে মহিলা আমাকে ২০,০০০/- টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। আমাকে জোর করে ঘরের একটি কক্ষের মধ্যে আটকে রাখে। আমি একাধিক বার ঐ বাড়ী হতে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আমাকে ধরে মারপিট করে এবং একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখে। আমাকে মারপিট করার সময় সাউন্ড বক্স উচ্চস্বরে বাজায় যাতে আমার ডাক চিৎকার বাহির থেকে শুনতে না পায়। আমাকে ঠিকমত খাবার দেয় না এবং সূর্যের আলো দেখতে দেয় না। আমাকে দিনে একবার আলু ভর্তা ও ডাউল দিয়ে এক প্লেট ভাত দিত। আমাকে রুমের মধ্যে আটকে রেখে জোর পূর্বক বিভিন্ন পুরুষের সাথে টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করে। আমরা তিন জন ছাড়াও আরো এখানে ১১ জন আমার মত আছে। স্যার তাদের ওই গোডাউনে আটকে রাখা হয়েছে।
পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য মতে উক্ত বাড়ীর মধ্যে একটি তালাবদ্ধ অবস্থায় অন্ধকারাচ্ছন্ন গোডাউন হতে মানব পাচারের শিকার আরো ১১ জনসহ সর্বমোট ১৪ জন কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে এসংক্রান্তে গোয়ালন্দঘাট থানায় একটি মানব পাচার মামলা রুজু করা হয়।

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!