Newsun24

Most Popular Newsportal

জাতীয়

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া জন্মদিন উপলক্ষে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে চায়না কমিউনিস্ট পার্টিও।

ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ গতকাল রোববার গণভবনে গিয়ে বিদায়ী সাক্ষাতে মোদির জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেন। এ সময় তার পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া ও শেখ হাসিনাকে উপহার দেন রিভা গাঙ্গুলি। জন্মদিন উপলক্ষে পাঠানো বিশেষ বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। হাইকমিশনার ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভারত সফরের কিছু দুর্লভ ফুটেজ উপহার দেন প্রধানমন্ত্রীকে।

এদিকে চায়না কমিউনিস্ট পার্টিও বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে। সিপিসি ইন্টারন্যাশনাল বিভাগের মিনিস্টার সং তাও স্বাক্ষরিত এক বার্তায় আগামীদিনে চায়না কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও এবার করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে দেশেই আছেন। এ বছর ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছেন। উচ্চ পর্যায়ের এই ভার্চুয়াল অধিবেশনে তিনি রোহিঙ্গা সংকট ও সাশ্রয়ী মূল্যে কার্যকর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী সমবণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার অন্যান্য বিশ্বনেতার অংশগ্রহণে ইউএনজিএ’র সাধারণ বিতর্কে প্রতি বছরের মতো বাংলায় রেকর্ডকৃত ভাষণ দেন। করোনা আতঙ্কের আবহেই তার জন্মদিন উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। নিজ দলের নেতাকর্মী এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষ এদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করবেন। দিনটি উপলক্ষে সারা দেশে সব মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

জন্মদিন প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার জন্মদিন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার রোল মডেল। শেখ হাসিনা আমাদের উন্নয়ন এবং অর্জনের রোল মডেল। তিনি নিজে যা অর্জন করেছেন তা নজিরবিহীন। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তার জন্মদিন পালন না করলে আমরা জাতির কাছে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব।

চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

এছাড়াও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে করোনাকালেও দেশের প্রবৃদ্ধি এশিয়ায় প্রায় সব দেশের উপরে। গত সাড়ে ৬ মাস বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একদিনের জন্যও বসে থাকেননি। করোনা মোকাবিলায় তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখা গেছে।

এ ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই করোনা মহামারীর মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকায় আমাদের প্রবৃদ্ধি এশিয়ার প্রায় সব দেশের উপরে। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্ব, সময়োচিত পদক্ষেপ, মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তা, খাদ্য সহায়তা, অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নের কারণে দেশে সাড়ে ৬ মাসে অনাহারে একজন মানুষেরও মৃত্যু হয়নি। খাদ্যের জন্য কোথাও হাহাকার দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মহামারীর মধ্যেও দেশ ও মানুষের জন্য দিনরাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। গত কয়েক মাসে শুধু কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার যেসব নির্দেশনা জারি করেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করলে এবং পরিমাণ বিবেচনা করলে অনুমান করা যায় জনগণের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে দিন-রাত কতটা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। শুধু করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেসব নির্দেশনা জারি করেছে, তার পরিমাণ ১ হাজার ৯৭৬ পৃষ্ঠা। ভবিষ্যতে করোনা মহামারীর মতো যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলার কথা চিন্তা করে এসব নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এসব নির্দেশনা বই আকারে পাঁচটি ভলিউমে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা ও পদক। এ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সংখ্যা ৩৯টি। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য গত বছরের (২০১৯) ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। একই মাসে শেখ হাসিনাকে ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পদক প্রদান করা হয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এ নেত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ বারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেলসহ তারা পাঁচ ভাই-বোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন।

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!