Newsun24

Most Popular Newsportal

আরো স্বাস্থ্য

জেনে নিন রক্তদানের উপকারিতা

অনলাইন ডেস্ক, নিউসান টয়েন্টিফোর ডটকম:

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। মানুষকে স্বেচ্ছায় এবং বিনামূল্যে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত জীবন বাঁচায়’ থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের আলোকে ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে প্রথম আন্তর্জাতিক রক্তদাতা দিবস পালিত হয়। এরপর প্রতিবছরই এ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

 

বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘রক্ত দিন এবং পৃথিবীকে একটি স্বাস্থ্যকর স্থানে পরিণত করুন।’

একজন রক্তদাতা ব্যক্তি কীভাবে সমাজের অন্যান্যদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে সে বিষয়টিই সবার সামনে তুলে ধরা এ দিবসের অন্যতম লক্ষ্য। যদিও রক্ত​দান পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য সমাজেই একটি মহৎ কাজ, কিন্তু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরা রক্তদান করতে ভয় পান।

চলুন জেনে নেই রক্তদানের প্রাথমিক নানা ধারণা এবং সুবিধা সম্পর্কে।

– একজন রক্তদাতা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা জরুরি। যেমন:

– আপনার বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।

– আপনার ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি হতে হবে।

– রক্তদানের সময় আপনার শরীর অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে।

– নিয়মিত রক্তদানের ক্ষেত্রে আপনাকে একবার রক্ত দেয়ার পর কমপক্ষে ৮ থেকে ১৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে পুনরায় রক্তদানের জন্য।

– আপনি যদি সর্দি, গলা ব্যথা, পেট ব্যথা বা অন্য কোনো সংক্রমণে ভুগে থাকেন তাহলে রক্তদান করতে পারবেন না।

– আপনি যদি দাঁতের ছোট কোনো চিকিৎসা করে থাকেন তবে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা এবং দাঁতের বড় ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকলে রক্ত ​​দেয়ার আগে কমপক্ষে এক মাস অপেক্ষা করুন।

– রক্তদানের জন্য আপনার রক্তে অবশ্যই ন্যূনতম হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ থাকতে হবে যেটি নারীদের জন্য ১২ গ্রাম/ডিএল এবং পুরুষদের জন্য ১৩ গ্রাম/ডিএল।

– আপনার যদি পরীক্ষায় কখনো এইচআইভি (এইডস ভাইরাস) শনাক্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই রক্ত দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

– আপনি যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে কোনো মাদক গ্রহণ করে থাকেন তাহলে রক্তদান থেকে বিরত থাকুন।

– সম্প্রতি ম্যালেরিয়া প্রবণ কোনো এলাকা ভ্রমণ করে থাকলে রক্তদান থেকে বিরত থাকুন।

এছাড়া কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন, তখন তার রক্তের প্লাজমাতে প্রোটিন অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা নতুন করোনভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে। যারা করোনা পুরোপুরি নিরাময় পেয়েছেন এবং সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পরও যাদের মধ্যে নতুন করে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ নেই, তাদেরকে রক্তের তরল অংশ বা প্লাজমা দানে উৎসাহিত করা হয়। তবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্লাজমা থেরাপি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

হার্ট অ্যাটাক এবং লিভারের বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি হ্রাস করে: আয়রন ওভারলোডকে হৃৎপিণ্ড, লিভার, অন্ত:স্রাব গ্রন্থি এবং সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অঙ্গে অতিরিক্ত আয়রন জমে থাকার বিষয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ২০১৩ সালের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেশি হলে হৃদরোগ এবং লিভারের অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি থাকে। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে আপনি নিজের শরীরের অতিরিক্ত আয়রন প্রতিরোধ করতে পারেন। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে আপনার হৃদরোগ এবং লিভারের অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো ক্যান্সার। রক্তদান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। যদি আপনি আপনার শরীরের আয়রনের স্তরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তবে লিভার ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার এবং অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে।

রক্তদানের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হবে। নতুন রক্তকণিকা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে।

রক্তদানের মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করা আপনাকে স্বর্গীয় মানসিক শান্তি এবং তৃপ্তি প্রদান করবে। এটি আপনাকে মানসিক চাপ মুক্ত করতে সহায়তা করবে, যা অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া রক্ত দেয়ার পর শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয় যা অকালে ত্বক কুঁচকে যাওয়া কমায়।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তদান করলে কোলেস্টেরল, লিপিড এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়া রক্তকণিকাগুলো আয়রন দিয়ে তৈরি হয়, যা অতিরিক্ত হলে রক্তনালীগুলোর কাজ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিয়মিত রক্ত​​দান করার মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত আয়রন প্রতিরোধ করতে এবং কোলেস্টেরল বজায় রাখতে পারেন।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যায় এবং ২-৫ কোটি মানুষ আহত হন বা অক্ষম হয়ে পড়েন। এই হতাহতের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘটে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে। আর অনিয়ন্ত্রিত রক্তক্ষরণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ লাখ ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

এছাড়া বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এসব শিশুর নিয়মিত রক্ত ​​সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান রক্ত ​​উৎপদদন করতে সক্ষম হয়নি। তাই রক্ত পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো দান করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করা। দান করা রক্ত ​​ভবিষ্যত প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হয়।

রক্তদান জীবন বাঁচাতে পারে। আপনি যখনই রক্তদান করছেন, তখন আপনি অন্তত তিন জনের জীবন বাঁচাতে অবদান রাখছেন।

সুস্বাস্থের অধিকারী প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রক্তদানের ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি নেই। প্রত্যেক রক্তদাতার জন্য নতুন/জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। সুতরাং রক্তদানের ক্ষেত্রে দাতার কোনো ঝুঁকি নেই। যদিও রক্তদানের পর আপনার বমিভাব বা মাথা ঘোরা অনুভব হতে পারে। তবে এ লক্ষণগুলো সাধারণত কয়েক মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়। এটি হলে আপনি সুস্থ বোধ না করা পর্যন্ত পা সোজা করে শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!