অনলাইন ডেস্ক, নিউসান টয়েন্টিফোর ডট কম:
করোনাসংকট কেটে যাওয়ার আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে মনে সাহস রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বিরাট ধাক্কা লেগেছে, বাধা এসেছে। তবে আশা করি বাধা দূর করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অসুখ-বিসুখে চিকিৎসার পাশাপাশি মনের জোর ও আত্মবিশ্বাসের কারণে অনেকটা সুস্থ হওয়া যায়।’ গতকাল রবিবার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার পক্ষে অনুদান গ্রহণ করেন মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এ সময় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।
করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে গৃহীত ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে মানুষের কষ্টের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু সেক্টর আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছি। কিছু জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যাতে মানুষ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করছি। কারণ এটা রোজার মাস।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, সবাইকে সেটা মেনে চলতে হবে। মেনে চলতে পারলেই সুরক্ষিত থাকা যাবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, কোনো বড় জায়গায় একসঙ্গে না হওয়া—এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সংক্রমিত না হওয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’ করোনার কারণে বিশ^ব্যাপী যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা-ও কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
ভয় পেয়ে অনেকের করোনাক্রান্তদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একজন পরিবারের সদস্য যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া, এমনকি তার কী অসুখ হলো না জেনেই তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া, এটা ঠিক নয়। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘নিজেকে সুরক্ষিত রেখে হ্যান্ডগ্লাভস ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করে পরিবারকে সহযোগিতা করলে, এতে খুব একটা ক্ষতির কারণ হবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু সন্তান হয়ে পিতাকে দূর করে দেওয়া বা স্ত্রী হয়ে স্বামীকে দূর করে দেওয়া বা মাকে দূর করে দেওয়া—এটা কখনোই কল্যাণকর নয়।’
আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসুখ-বিসুখ হলে মনে সাহস রাখতে হবে। কেবল ডাক্তার ও ওষুধেই রোগ ভালো হবে না। মনের জোর থেকে, আত্মবিশ্বাস থেকেও কিন্তু অনেকটা সুস্থ হওয়া যায়।
সবাইকে মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সবার কষ্টের বিষয়টি উপলব্ধি করেই সরকার ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক সহমর্মিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে যারা বেশি ধন পেয়েছেন তাদের অন্যদের সহযোগিতা করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য এ কথাটা চিন্তা করেই সবাইকে কাজ করতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সংকট মোকাবিলায় যারা কাজ করে যাচ্ছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক গুণগুলো এটাই হচ্ছে মনুষ্যত্ব। আর এটাই আমাদের বাঙালির সবচেয়ে বড় পরিচয়। এ চরিত্রটাই সবার থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।’ কর্তব্য পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন তিনি। এ সময় ধানকাটাসহ মানবিক কাজে এগিয়ে আসায় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও এ সংকট মোকাবিলায় গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করে দেশের আরও ৫৭টি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় কভিড-১৯ মোকাবিলায় সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এর আগেও কয়েক ধাপে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিরা।
গতকাল অনুদান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়; উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও কলেজ; মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ; কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ; খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেএইউ); কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়; পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ডুয়েট), গাজীপুর; নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি; নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়।