হঠাৎ রুম অন্ধকার হয়ে গেলো। আলো জ্বালিয়ে মোবাইলে সময় দেখলাম বেলা ১ টা ৪০ মিনিট। মনে মনে ভাবছি কি হলো দুপুর বেলায় এতো অন্ধকার। জানালা দিকে তাকিয়ে দেখি বাহিরেও তাই। জানালার পাশে এসে দাড়ালাম দেখি আকাশ টা গম্ভীর কালো ধোঁয়াশা মেঘের ভেলা সূর্য কে ঢেকে দিয়েছে। বুঝতে বাকি রইলো না মেঘ নামিবার পায়তারা।
মনটা ভিশন অস্থির হয়ে আছে বেশ কয়েক দিন যাবৎ। বদ্ধ এক রুমের একটি ফ্ল্যাট এটাস্ট বাথরুম সিঁড়ির কাছে রান্না ঘর। একা একা আছি আজ এক মাসের বেশি সময়। বাহিরে করোনা আতঙ্কের ভয় ভিশন ছোঁয়াছুঁয়ি রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পরে তাই বাহিরেও যাইতে পারি না। সরকার-ও কঠর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহিরে যাইতে পারবে না।
এই এলাকায় আমি নতুন সবে মাস দুয়েক বাসাটা ভাড়া নিয়েছি পরিচিত জন বলতে কেউই নেই থাকলেও কথা হয় না। আর হলেই বা লাভ কি মন খুলে দেখা করে কথা বলা অসম্ভব। সরকারি সাধারণ ছুটির প্রথম প্রথম ভালোই সময় কাটিতেছিল বেশ কয়েকজন লেখকের বই পড়েছি আহমদ ছফা, হুমায়ুন আহমেদ, আনিসুল হক। আর মাঝে মাঝে ইউটিউবের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে বিছানায় গড়াগড়ি দিয়েছি। তাতেও এখন মন স্থীর নয়। সে যেনো উম্মাদের মতো বাড়ীর দিকে টানছে।
পবিত্র মাহেরমজান মাস উপলক্ষে ভোরে সেহেরি খেয়ে সারাদিন রোজা রাখি। যথা সময় আজান শেষে বাসায় নামাজ আদায় করি। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার দেশের সকল মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ না আদায়ের জন্য কঠোর ভাবে সর্তক করছে তাই মসজিদে পড়েছে তালা। বাদ্ধ হয়ে সকল নামাজ প্রিয় মানুষ বাসায় নামাজ পড়ে।
বাসায় আমি অদ্বিতীয় ব্যক্তি তাই নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতে হয়। আজ বৃষ্টির দিন তাই ইচ্ছা হলো খিচুড়ি রান্না করি সেই সুবাদে ইউটিউবে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি বেশ কয়েকটা বাছাই করে সহজে রান্নার উপায় খুজে বের করলাম। সাতে একটি ডিমও ভাজলাম। মনে মনে খুবই খুশি নিজের হাতে রান্না করে অনেক দিন পর খিচুড়ি খাবো।
ইফতার শেষ করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বিছানায় শুয়ে আনিসুল হকের লেখা “খেয়ার” পিডিএফ ফাইল দেখতে লাগলাম। হঠাৎ মিনুর ফোন গাঁ টা একটু ঝাঁকি দিয়ে উঠলো মনে হয় খুব মনোযোগ সহকারে খেয়ার সাথে তাল মিলিয়ে মধ্যেবৃত্ত পরিবারের কথা ভাতেছিলাম।
মিনুর সাথে কথা শেষ করে খিচুড়ি খাওয়ার পালা। যথারীতি প্লেট পরিস্কার করে খিচুড়ি নিয়ে টেবিলে রাখলাম। বিসমিল্লাহ বলে মুখে দিতেই কেমন যেনো লাগলো এ যেনো লবণপুরী। মনে খুব কষ্ট পেলাম। রান্না না জানা ছেলেদের একা থাকার বোধ হয় এখানেই সবচেয় বড় কষ্ট।
শুধু ডিম ভাজা টা খেয়ে আবার শুয়ে পরলাম আর মনে মনে মা’ কে খুব মিস করতে লাগলাম আজ মায়ের সাথে থাকলে বোধহয় খিচুড়ি টা মজা করেই খেতে পারতাম।
লেখক:
মনিরুল ইসলাম (মনির)
শিক্ষানবীশ, ঢাকা জর্জকোর্ট।