অনলাইন ডেস্ক, নিউসান টয়েন্টিফোর ডট কম:
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ১০ মে দোকানপাট-শপিং মল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারের এমন সিদ্ধান্ত করোনা বিপর্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তেমনি সাধারণ মানুষও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দোকানপাট খোলার বিরোধিতা করে নানা যুক্তি তুলে ধরছে।
সচেতন মহল বলছে, করোনাকালে শপিং মলের বিকল্প হতে পারে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো। এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেই মানুষ নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারে। আর মানুষের দোরগোড়ায় প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়ে সেই কাজটি করছে ই-কমার্স কম্পানিগুলো।
গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ‘করোনাভাইরাস সংক্রান্ত’ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শপিং মলগুলো খুলে দিলে দেশে করোনার সংক্রমণ আরো বাড়বে।’
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে অনলাইন কেনাকাটাকে নিরাপদ বিকল্প বলে মনে করছেন তথ্য-প্রযুক্তিবিদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ার কারণে ঢাকা শহর করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অনলাইনে শুধু কেনাকাটা নয়, অফিশিয়াল কাজসহ যা কিছু করা যায় তা করতে হবে। আমাদের হয়তো এখনো আত্মবিশ্বাস হয়নি। তার পরও যারা সেবা দিচ্ছে মোটামুটি ভালো সেবাই দিচ্ছে। তাই সরকার দোকান-শপিং মল খুলে দিলেও নিজেদের বিবেচনাবোধ কাজে লাগাতে হবে। নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক হবে না। খুব প্রয়োজন না হলে আমরা যেন বের না হই।’
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘লকডাউনের পর থেকেই ই-কমার্স খাতকে সরকার জরুরি সেবার আওতাভুক্ত করেছে। অনলাইন কোনাকাটায় যেহেতু সংক্রমণের ঝুঁকি কম, তাই মানুষের অনলাইন কোনাকাটার প্রবণতা বাড়ছে। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ই-ক্যাবের সদস্যদের নিয়ে জনগণের পাশে রয়েছে ই-ক্যাব। ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে আমরা এই সময়ে ব্যবসাকে প্রাধান্য না দিয়ে মানুষের সেবাকে প্রাধান্য দিয়েছি। পাড়ার দোকানিরাও যেন এই সেবায় যুক্ত হতে পারেন সে জন্য আমরা তাঁদেরও এই প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নিয়েছি।’
লকডাউনের মধ্যে শুধু ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইনে সরবরাহের অনুমতি দিলেও সম্প্রতি ই-ক্যাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক, বই, ইলেকট্রনিক পণ্য ও রেস্তোরাঁয় তৈরি খাবার অনলাইনে বিক্রির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৫ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা এই নির্দেশনায় ঈদ সামনে রেখে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের অনলাইন বাণিজ্য অনুমোদন দেওয়া হয়। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনলাইনে অর্ডারকৃত এসব পণ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিক্রি ও সরবরাহ করতে বলা হয়।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ডেলিভারির ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সব রকমের সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়েছি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন মুদি পণ্য কেনা বেড়েছে কয়েক শ গুণ। এখন পণ্য বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া বা ডেলিভারি ম্যানের সংকট রয়েছে। যেসব পেশাজীবী পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে এখন বেকার রয়েছেন, তাঁদের ডেলিভারি ম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সংকট দূর করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ই-ক্যাব।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রায় সাত হাজার ৫০০ প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া ফেসবুক পেজ খুলে এই ব্যবসায় যুক্ত ২০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ই-কমার্স খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দারাজ, চালডাল, আজকের ডিল, বাগডুম, প্রিয় শপ, রকমারি, পিকাবু, অথবা।