Newsun24

Most Popular Newsportal

আইন-আদালত আরো রংপুর-বিভাগ

‘কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন প্রত্যাহার হচ্ছেন’

গভীর রাতে বাড়ি থেকে নিজ কার্যালয়ে এনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আটক ও পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের ঘটনায় বিতর্কিত কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আগে থেকেই কিছু কারণে ওই সাংবাদিকের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন ডিসি।

সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহারের তথ্য জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এছাড়া তার বিরু‌দ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হ‌চ্ছে ব‌লেও জা‌নিয়ে‌ছেন প্র‌তিমন্ত্রী। আজ রবিবার স‌চিবাল‌য়ে নিজ দফত‌রে সাংবা‌দিক‌দের স‌ঙ্গে আলাপকা‌লে প্র‌তিমন্ত্রী এ কথা জানান।

সাংবাদিকের সঙ্গে ডিসির বিরোধের পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়ে যায়। এরপর আজ ওই ডিসিকে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এআজ রবিবার (১৫ মার্চ) সকাল পৌনে ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিনে মুক্তি দেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের এই জেলা প্রতিনিধিকে।

এর আগে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাজার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল ও জামিনের আবেদন করেন রিগান। সকাল পৌনে ১১টার দিকে শুনানি শেষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা ২৫ হাজার টাকা জামানতে তাঁর আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন ও কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি অ্যাড. আহসান হাবিব নিলুর জিম্মায় জামিন দেন রিগানকে। এর কিছুক্ষণ পরই কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

মধ্যরাতে সাংবাদিককে নির্যাতন ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজার বিষয়টি অনুসন্ধানে আগেই রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার কে. এম. তারিকুল ইসলাম এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেন, জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারেন না।

জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্যদের একটি টিম কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ায় রিগ্যানের বাড়িতে হানা দেয়। এরপর মারধর করতে করতে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পোশাক খুলে দুই চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিসি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন। এরপর মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ও পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠান ভ্রাম্যমাণ আদালত।

যদিও আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু এ বিষয়ে বলেছেন, মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পেটানো, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।

অবশ্য অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আটক করা হয় বলে দাবি করেছেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা।

তবে মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের কথা বলা হলেও ওই অভিযানে একমাত্র সাংবাদিক রিগানকে ছাড়া আর কাউকে আটক করা বা সাজা দেওয়া হয়নি। স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে মানববন্ধন করেছেন।

রিগানের সহকর্মীরা বলেছেন, জেলা প্রশাসক ও প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণে প্রতিশোধমূলকভাবে ধরে এনে সাজানো মামলায় তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সাংবাদিক রিগানের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতুর সঙ্গে কথা বলে গতকাল বিবিসি বাংলা জানায়, ‘শুক্রবার রাত ১২টার দিকে অনেক লোকজন এসে আমাদের বাসার দরজা খুলে দিতে বলে। একপর্যায়ে ওনারা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সাত-আটজন মিলে আমার স্বামীকে মারতে শুরু করে। তাদের হাতে রাইফেল, পিস্তল সবই ছিল। তখন বারবার বলছিল, কয়দিন ধরে খুব জ্বালাচ্ছিস। গুলি করে দেব। বলে আর মারে। সারা রাস্তা মারতে মারতে নিয়ে গেছে।’

তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেছেন, রাত ১টার দিকে তাঁরা জানতে পারেন রিগানকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে মাদকের মামলায় এক বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, রিগানের বাড়ি থেকে ৪৫০ মিলিলিটার দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে সে দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’

তবে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, সাংবাদিক রিগান এর আগে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সংবাদ করেছিলেন। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে তাঁকে নতুন আর কোনো সংবাদ না করার জন্যও বলা হয়েছিল। সে নির্দেশ না মানায় ডিসি তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন।

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!