Newsun24

Most Popular Newsportal

বিনোদন

অভিনয় আমাকে খুব বেশি টানে

বিনোদন প্রতিবেদক;

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ড্রিমগার্ল খ্যাত নায়িকা রোজিনা। সোনালি সময়ের আলোচিত তারকা রোজিনা। যিনি তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করে এ দেশের আপামর দর্শকের মনে স্থায়ী আসন গেড়েছেন। পেয়েছেন দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি।

চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হওয়ার পর থেকেই বেশির ভাগ সময় লন্ডনে থাকেন রোজিনা। তবে শেকড়ের টানে মাঝে মধ্যেই তিনি দেশে আসেন। রোজিনা বলেন, ‘করোনা নিয়েই আমাদের ভালো থাকার চেষ্টা চালাতে হবে। এখন এ ছাড়া কিছু করার নেই। কত দিন আর ঘরে বসে থাকা যায়। তবে সতর্ক হয়ে চলতে হবে আমাদের।’

রোজিনা সিনেমায় আসার পর বাংলাদেশের বাইরের চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। নেপালি, পাকিস্তানি, ভারতীয়সহ প্রায় ৩০০ ছবিতে অভিনয় করা হয়েছে তার। অভিনয়ের বাইরে তিনি ১৫-২০টি নাটক-টেলিফিল্ম পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাণকাজও করা হয়েছে আমার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও শরৎচন্দ্রের সাহিত্য নিয়েই বেশি কাজ করেছি। প্রথম পরিচালনা করেছি শরৎচন্দ্রের “ষোড়শী”তে। এটি চ্যানেল আইতে প্রচারিত হয়েছিল। এ ছাড়া মেজদিদি, বনের পাপিয়া ইত্যাদি গঠনমূলক নাটক নির্মাণ করেছি।

অনেকেই আছেন, যারা নির্দিষ্ট ছকের বাইরে কাজ করতে অভ্যস্ত নন। রোজিনা অভিনয়ের বাইরে যেমন নির্দেশনা দিয়েছেন, তেমনই সাহিত্যের বাইরেও নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘সাহিত্যের বাইরেও দু-একটি নাটক-টেলিফিল্ম করেছি। হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালের গল্প নিয়েও কাজ করেছি। কবি কিংকর চৌধুরীর কাহিনি অবলম্বনে “বদনাম” নামের একটি ধারাবাহিক নাটক ও চ্যানেল আইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক “আলোর পথের যাত্রী” নির্মাণ করেছি। কাজগুলোর প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছি। সর্বশেষ ৫-৬ বছর আগে “আলোর পথের যাত্রী”তে নির্দেশনা দিয়েছি। সিনেমার কাজ শেষ না করে নাটক-টেলিফিল্মে নির্দেশনা দেব না।’

চিত্রনায়িকা হিসেবে খ্যাতি পেলেও রোজিনার অভিনয় শুরু হয়েছিল মঞ্চ থেকে। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছোট পর্দায় পরিচালনা করেও প্রশংসিত হয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে চান চলচ্চিত্রে। তার “ফিরে দেখা” ছবিটি চলতি অর্থবছরে অনুদান পেয়েছে। ছবিটির কাহিনিকার, পরিচালক ও প্রযোজকও তিনি। রোজিনা বলেন, ‘অভিনয় করেই মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছি। এজন্য যতই দূরে থাকি না কেন, অভিনয় আমাকে খুব বেশি টানে। যেহেতু সিনেমাটির প্রযোজক ও পরিচালক আমি এবং গল্পও আমার নিজেরই তৈরি করা, তাই চেষ্টা করছি একটি সাবলীল পরিবেশের মধ্য দিয়েই এর কাজ সম্পন্ন করার।’

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। হবে আরো। নানাভাবে উপস্থাপিত হয়েছে নির্মিত ছবিগুলো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত প্রায় ছবিই আলোচনায় এসেছে। রোজিনার “ফিরে দেখা” ছবির গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব ঘটনা ঘিরে। তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে তখন আমি ছোট থাকলেও আমার খুব ভালো মনে আছে, যুদ্ধের সেসব দিনের কথা। আমার দাদাবাড়ি রাজবাড়ী ও আমার নানার বাড়ি গোয়ালন্দে। আমি দেখেছি পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম আক্রমণ, রাজাকারদের নির্দয় দেশদ্রোহী কাজ। সেসব আমার হূদয়ে দাগ কেটে আছে। স্মৃতি থেকে এতটুকুও হারিয়ে যায়নি। সেই বাস্তব ঘটনাগুলো একসময় সেলুলয়েডে বাধার পরিকল্পনা করি।’

রোজিনা তার ছবির শুটিং ও শিল্পী নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘চিত্রনাট্য যতই নাড়াচাড়া করছি ততই পরিবর্তন ও সংশোধন হচ্ছে। ভালো করতে গিয়েই বারবার ঘষামাজা করছি। তবে এ বছর শুটিংয়ে যাচ্ছি না। করোনা পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হলে শুটিংয়ে যাব। শিল্পী নির্বাচন নিয়ে ভাবছি। আমিসহ মুখ্য চরিত্রে আরো ৪-৫ জন অভিনয় করবেন। কয়েকজনকে পরিকল্পনার তালিকায় রেখেছি। চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করতে চাই না।’

“ফিরে দেখা” ছবির জন্য দুটি গান রাখছেন রোজিনা। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার এই ছবিটি বাণিজ্যিক ধারার ছবি নয়। তাই খুব বেশি গান রাখছি না। দুটি গান রাখার চিন্তা করেছি। দুটি গানই কবির বকুলের লেখা। ইতোমধ্যে একটি গান লেখা শেষ হয়েছে। কয়েকদিন আগেও গানের বিষয় নিয়ে বসেছিলাম।’

চলচ্চিত্রের চলমান অবস্থা সম্পর্কে রোজিনা বলেন, ‘বর্তমান চলচ্চিত্রে মৌলিক গল্পের অভাব আছে ঠিক, তবে শুধু এ কারণেই যে দর্শক হলে আসছে না তা নয়। অন্যান্য কারণও জড়িত। আমাদের পর শাবনূর, মৌসুমীদের সময়টাও ভালো ছিল। এরপর কোথাকার মুনমুন, ময়ূরীর মতো মেয়েরা এসে চলচ্চিত্রের পরিবেশটা নষ্ট করে দিয়েছে। এজন্য কিছু অসৎ প্রযোজক, পরিবেশক ও নির্মাতারাও দায়ী। অবশ্য এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তার পরেও আগের পরিবেশ ফিরে আসেনি। আগের মতো দর্শক হলে সপরিবারে সিনেমা দেখতে যেতে পারেন না। যতদিন না দর্শক পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমা হলে যেতে পারবেন, ততদিন হলে দর্শকশূন্যতা বিরাজ করবে বলে আমার মনে হয়। এ ছাড়া সিনেমা হলের সুন্দর পরিবেশ, ভালো গল্প, ভালো নির্মাণ, অভিনয়, প্রযুক্তির ব্যবহারেরও গুরুত্ব দিতে হবে।’

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!