করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫ জেলার স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্র বাহিনীর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি বিশেষ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করে দেব।’
তিনি বলেন, ‘পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার হবে এই ইনস্যুরেন্স। পাশাপাশি কর্তব্য পালনকালে কেউ কভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তার সার্বিক চিকিৎসা সরকার নিশ্চিত করবে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ মৃত্যুবরণ করলে এই ইনস্যুরেন্সটি ৫ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে।’
এজন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই করোনার বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, সেই যুদ্ধের সম্মুখভাগে থেকেই আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দায়িত্ব পালন করেছেন তাই এটি আপনাদের পুরস্কার।’
তিনি বলেন, যারা করোনার শুরুর সময় সেই জানুয়ারি থেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিশেষ করে মার্চ মাসে দায়িত্ব পালন করেছেন কেবল তাদের জন্যই এই এই বীমা সুবিধা থাকবে।’
‘সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এই করোনা আমরা মোকাবিলা করেছি বলেই পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি এবং অন্যান্য দেশের মতো এটি এত ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হতে পারে নাই’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি একই সঙ্গে কর্তব্য পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের পুরস্কৃত করার এবং দায়িত্বে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ও ইঙ্গিত দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সাহসী স্বাস্থ্যকর্মী তাদের উৎসাহ দেওয়াটা প্রয়োজন এবং এজন্য একটা বিশেষ সম্মানী ও আমি দিতে চাই। সেজন্য আমি তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি এবং তালিকা করার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী কভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন তাঁদের পুরস্কার প্রদান করতে হলে তালিকাটা আমার দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পাওয়া সংক্রান্ত মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি সংবাদে দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে যে সব হাসপাতালে গিয়ে সে চিকিৎসা সেবা পায়নি তাতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কাজ করেনি এবং নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য পালিয়ে গেছে এবং যেখানে রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পায়নি, অন্য সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হয়েছে তাদের জন্য এই সম্মানী বা প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে না। বরং ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারি করতে পারবে কিনা সেটাই চিন্তা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই রোগী যেখানে যেখানে গিয়েছে (চিকিৎসার জন্য) সেখানে কোন কোন ডাক্তার দায়িত্বে ছিল তাদের নামটা আমি জানতে চাই। তাদের ডাক্তারি বা চাকরি করার সক্ষমতা নেই। তাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়াটা উচিত বলে আমি মনে করি।’
ডাক্তারদের সুরক্ষায় সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অ্যাপ্রোন পরে চিকিৎসা করুন। আপনাদের সুরক্ষায়তো আমরা কোনো কার্পণ্য করছি না এবং ভবিষ্যতেও করবো না। চিকিৎসক হিসেবে আপনাদের তো দায় রয়েছে।’
একজন রোগী কেন চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে মারা যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী কেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে মারা গেল, প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্তারোপকারীদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যাদের মধ্যে এতটুকু মানবতাবোধ নেই তাদের শর্তারোপ করে কোন কাজ করার দরকার নেই। আল্লাহ না করুন দেশের তেমন খারাপ অবস্থা হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডাক্তার, নার্স এনে চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ, এই ধরনের দুর্বল মানসিকতা দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’