প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রোগটি থেকে সেরে ওঠা এক মার্কিন নারী। সুস্থ হওয়া সিয়াটলের বাসিন্দা এলিজাবেথ স্নেইডার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘আতঙ্কিত হবেন না; যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের নিয়ে চিন্তা করুন, অসুস্থ হয়েছেন মনে হলে ঘরে থাকুন।’
যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে হাজারেরও বেশি করোনাক্রান্ত লোকের সন্ধান পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যাও পৌঁছেছে ৩৮-এ। দেশটির যেসব অঙ্গরাজ্যে ভাইরাসটির উপস্থিতি মিলেছে, এর মধ্যে ওয়াশিংটন স্টেটেই কভিড-১৯-এ মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। এই অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর সিয়াটলেই স্নেইডারের বাস। তিনি জীব প্রকৌশলে পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
স্নেইডার জানান, তাঁর সংক্রমণের তীব্রতা ছিল তুলনামূলক হালকা, যে কারণে ঘরে বিশ্রাম নিয়েই তিনি সুস্থ হতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘এর পরও এটি একেবারেই অপ্রচারিত হওয়ার মতো বিষয় নয়। কেননা বৃদ্ধ ও অসুস্থ অনেকের অবস্থাও এমন। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের ঘরে থাকার ব্যাপারে, অন্যদের থেকে আলাদার রাখার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে।’
৩৭ বছর বয়সী এ নারী জানান, একটি পার্টিতে অংশ নেওয়ার তিন দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি শরীরে নিউমোনিয়াসদৃশ উপসর্গের উপস্থিতি টের পান তিনি। তাঁর কথায়, ‘ঘুম থেকে জেগে উঠে আমি ক্লান্ত বোধ করি। জেগে উঠে কাজে যাওয়ার আগে এ রকম অনুভূতি প্রায়ই হয়, কেননা আগের সপ্তাহেও আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম।’
ওই দিন দুপুরবেলায় তাঁর মাথা ব্যথা শুরু হয়, সঙ্গে দেখা দেয় জ্বর ও শারীরিক যন্ত্রণা। জীব প্রকৌশল কম্পানির বিপণন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা স্নেইডার সঙ্গে সঙ্গেই অফিস থেকে বাসায় চলে আসেন। খানিকক্ষণ ঘুমানোর পর তিনি তাঁর দেহে তীব্র জ্বরের উপস্থিতি টের পান; ওই রাতেই তাঁর দেহের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উঠে যায়। স্নেইডার বলেন, ‘ওই সময় আমার অনিয়ন্ত্রিত কাঁপুনি শুরু হয়; ঠাণ্ডা লাগা এবং ঝিমঝিম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি।’
তাত্ক্ষণিকভাবে তিনি ঠাণ্ডার ওষুধ খেয়ে নেন এবং জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে পারবেন—এমন এক বন্ধুকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। সৌভাগ্যক্রমে পরের কয়েক দিনেই তাঁর জ্বর কমে যায়।
স্নেইডার জানান, জানুয়ারির শেষ দিকে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই তিনি করোনাভাইরাস সম্পর্কে খবরাখবর নিচ্ছিলেন। জ্বর আর মাথা ব্যথা হলেও কাশি কিংবা শ্বাসজনিত সমস্যার মতো সাধারণ উপসর্গ না থাকায় নিজেকে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত বলে মনে করেননি তিনি। ঠাণ্ডা লাগলেও তিনি ব্যাপারটাকে সাধারণ হাঁচি-কাশি বলেই মনে করেছিলেন। ভেবেছিলেন, চিকিৎসকের কাছে গেলেও তো তাঁকে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে এবং বেশি করে তরল খাবার খেতেই বলা হবে।
কয়েক দিন পর স্নেইডার এক বন্ধুর ফেসবুক পোস্ট থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তিনি যে পার্টিতে গিয়েছিলেন, সেখানকার কয়েকজনেরও তাঁর মতোই জ্বর ও মাথা ব্যথা হয়েছিল জানতে পেরে নিজের অসুস্থতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। পার্টিতে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজন পরে চিকিৎসকের কাছে গেলেও তাদের দেহে ফ্লু ধরা পড়েনি। চিকিৎসকের কাছে গেলে তাঁর দেহেও ফ্লু ধরা পড়বে না, এমনটা বুঝতে পেরে স্নেইডার পরে সিয়াটল ফ্লু সেন্টারের গবেষণা কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করেন।
গবেষণায় নিযুক্ত দলটি স্নেইডারকে সর্দি পরীক্ষার একটি সরঞ্জাম পাঠায়। নির্দেশনা অনুযায়ী সর্দি পাঠানোর পর তাঁকে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়। স্নেইডার বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ৭ মার্চ ওই গবেষকদলের এক সমন্বয়ক আমাকে ফোন করে জানান যে আমি কভিড-১৯-এ আক্রান্ত। আমি খানিকটা বিস্মিত হয়েছি, ভেবেছি এটা চমৎকার কিছু হবে। আমি হাসছিলাম, কিন্তু মাকে বলার পরপরই তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন। সত্যি কথা বলতে, বেশি অসুস্থ থাকলে হয়তো এমনটা মনে করতাম না আমি। বৈজ্ঞানিক কৌতূহল এবং শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পেরে আমার কাছে এমনটা মনে হয়েছিল।’
নিজের আক্রান্ত হওয়ার খবর যত দিনে তিনি জেনেছিলেন, তত দিনে উপসর্গগুলো প্রায় বিলীন হয়ে গিয়েছিল। উপসর্গগুলো ফের দেখা দিলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ স্নেইডারকে সাত দিন আর উপসর্গ না থাকলে ৭২ ঘণ্টা ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল। কয়েক দিনের ভেতর স্নেইডার আরো সুস্থ হয়ে ওঠেন।
স্নেইডার বলেন, ‘মূল বার্তা হচ্ছে—আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। যদি আপনার সন্দেহ হয়, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করান।